Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রথমবারের মতো আয়োজিত মৌ-মেলা-২০১৬ এর শুভ উদ্বোধন


প্রকাশন তারিখ : 2016-02-28

মধু চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও মধু রপ্তানির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ‘মৌ মেলা-২০১৬’।‘ মিলবে পুষ্টি বাড়বে ফলন, আয় বাড়াবে মৌ পালন’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্ত্বরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ হতে ১মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত তিনদিনব্যাপি মৌ-মেলা ২০১৬ এর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্পমন্ত্রী জনাব মো. আমির হোসেন আমু, এমপি। মাননীয় মন্ত্রী বলেন, উদ্ভিদের পরাগায়নে মৌমাছির ভূমিকা অপরিহার্য। মৌচাষের ফলে কৃষিখাতে উৎপাদনশীলতা ১০-২০ ভাগ বেড়ে যায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিকের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ২০১২-২০১৭ মেয়াদে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। ৪,৩৭০ জন মৌচাষিকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে এবং বিসিক হতে ৯% সরল সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মধুর গুনগতমান বিশ্বমানের। ইতোমধ্যে স্লোভেনিয়ার মধু উৎপাদনকারী ও বিপনকারী প্রতিষ্ঠান মেডেক্স-এ সাথে বিসিকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ৪হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ও মৌচাষির সংখ্যা বাড়ালে বছরে ১ লাখ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব। মন্ত্রী আরও বলেন, রপ্তানি বাড়াতে গুনগতমানের মধু উৎপাদনের প্রতি জোর দিতে হবে। মধু সংগ্রহে উন্নত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগসহ মধুর প্যাকেজিংয়ে আধুনিকতা আনতে হবে। তাহলে বাংলাদেশি মধু বিশ্ববাজারে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে। বিসিক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌচাষের উপকারিতা সম্পর্কে চাষিদের সচেতন করে মৌচাষ সম্প্রসারণ ও মধু উৎপাদনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, আগেকার দিনে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর প্রথম মুখে মধু দেয়া হতে, কিন্তু তা আর নেই। আগে প্রত্যেকটি বাড়িতে একটি করে মধুর শিশি থাকতো, এখন সেটা আর দেখা যায় না। আমাদের খাদ্য তালিকায় আসলে মধু নাই, আছে ঔষধের তালিকা। আমাদের শহুরে জীবনে মধু নিয়ে আমরা চিন্তা করি না, তবে খুব উচ্চবিত্ত বা বিদেশ থেকে জীবন-যাপন করে আসছেন তারা তাদের খাবারে মধুটা রাখেন। আমাদের মধ্যবিত্তের মধ্যে মধুর প্রচলন কমে গেছে, আমরা আমাদের শৈশবে, তারুন্যে, যে জিনিটা দেখছি, মধুর যে ব্যবহার তা এখন আর মধ্যবিত্তের মধ্যে নেই, নিম্নবিত্তের ক্ষেত্রে তো প্রশ্নই আসে না। মাননীয় মন্ত্রী উল্লেখ করেন, আমরা যখন দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম তখন আমার সিদ্ধান্ত হলো আরো অন্যান্য জিনিষে আমাদের স্বয়সম্পূর্ণ হতে হবে। আমাদের তেলের ওপর আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে আনা উচিত। তেলের উৎপাদন বাড়াতে হলে সরিষা, তিল, তিসি এসব হতে তেল আহরণ করতে চাই, এতে মৌচাষের বিস্তার ঘটাতে হবে। মধু হলো একটি বাই প্রোডাক্ট। আর যারা ফসল ফলান তাদের কথা চিন্তা করতে হবে, মধু যারা আহরন করেন তাদের কথাও চিন্তা করতে হবে। এছাড়াও যারা ব্যবসায়ী তাদের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। মধু এমন একটা জিনিষ মানুষ যদি ভেজাল না দেয় মৌমাছি কোনো ভেজাল দিবে না, কারন মৌমাছির ভেজাল দেয়ার টেকনোলজি জানা নাই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মৌচাষিদের ও মধু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই শুধু তেল ফসলে না ডাল ফসলেও পরাগায়নের মাধ্যমে যেন ১৮-২০% বৃদ্ধি পায় সে স্বার্থে কাজটা আমরা সানন্দ চিত্তে করবো। দেশের সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কৃষিবিদরা এ সহযোগিতাটা আপনাদের করবে। পেটের ভাতের চিন্তা যখন একটু কমে আসে, তখন মানুষ অন্য দিকে তাকায়। আজকে আমাদের সে অন্যদিকে তাকানোর যে তৌফিক আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন, আসেন আমরা মধু দিয়ে  মানুষের জীবন মধুর করে তুলি।

 

অনুষ্ঠানে সভাপতি কৃষি সচিব জনাব আনোয়ার ফারুক বলেন, প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ খাদ্য হিসেবে পরিচিত মধু। মধু চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ, যেসব ফসল ও ফলে মধু চাষের সম্ভাবনা আছে সেসব ফসল ও ফলের চাষ বাড়ানো, মধু চাষি ও বাজারজাতকারীর মধ্যে সমন্বয়, প্রচলিত মৌ চাষের গতি বাড়ানো, শস্যের সঙ্গে মধু চাষ যুক্ত করাসহ নানা লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা প্রচুর পরিমাণে মধু বাইরে থেকে আমদানি করে থাকি। আমাদের একটা সমস্যা- আমরা মনে করি বাইরের জিনিস বেশি ভালো। এ কারণে বেশি দাম দিয়ে হলেও বাইরের জিনিস কিনে থাকি। কিন্তু আমাদের দেশেই যে ভালো জিনিস উৎপাদন হয় সেটা আমরা ভাবি না। মানুষ একটু সচেতন হলে দেশের লাভ হয়। কৃষি সচিব বলেন, দেশে যে পরিমাণ সরিষা চাষ হয় তার তুলনায় আমরা মাত্র ২০ শতাংশ মধু আহরণ করতে পারি। ৮০ শতাংশ মধু আহরণ করা হয় না। এ কারণে ক্ষুদ্র চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধু আহরণ ও চাষের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে আমরা মধু রপ্তানি করতে পারবো। একই সঙ্গে মধু উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে চিনি আমদানিও কমে যাবে।


অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ মো. আবদুল মান্নান। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান। মৌ-চাষ সম্পর্কে বিসিকের পক্ষ থেকে উপস্থাপনা করেন মৌচাষ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জনাব খোন্দকার আমিনুজ্জামান। এছাড়াও মৌচাষি, মৌয়াল, মধু প্রক্রিয়াজাতকারী ও বাজারজাতকারীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মী, বিসিক এবং দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারি এবং প্রাইভেট উদ্যোক্তগণ অংশগ্রহন করেন। মেলায় ৩৬ টি স্টল স্থান পায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালিজিরা, লিচু এসব ফসলে মৌ-চাষ, মধু আহরন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।